এনাম হক:
বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)-এর নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও জালিয়াতির চেষ্টা ব্যর্থ করেছে প্রশাসন। অভিনব কৌশলে পরীক্ষায় প্রতারণার চেষ্টা চালানোর অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় আরডিএ প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত হয় অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা এবং অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ব্যবহারিক পরীক্ষা। চলে রাত ৮ টা পর্যন্ত। ঠিক এই সময়েই সন্দেহজনক আচরণের কারণে কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে নজরে আনেন পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
পরীক্ষা চলাকালেই প্রশাসন প্রথমে দুইজন পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। পরে তাদের সঙ্গে জড়িত আরও দুইজনকেও পুলিশ হেফাজতে নেয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন— শাপলা খাতুন, জিহাদ আফ্রিদি, মাইদুল ইসলাম ও ফারুক আহমেদ। এদের মধ্যে মাইদুল ইসলামের বাড়ি রংপুরে এবং ফারুক আহমেদের বাড়ি বগুড়ার ধুনুট উপজেলায়।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় মাইদুল ইসলাম নিজেকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দাবি করেন, “আমি শুধু পরীক্ষা দেখতে এসেছিলাম।”
তবে আরডিএ প্রশাসন জানিয়েছে, তার পরিচয় ভুয়া এবং তিনি আটক পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
আরডিএ সূত্রে জানা যায়, দুটি পদে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়— অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (৭টি পদ) এবং অফিস সহায়ক (১১টি পদ)। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে আবেদন করেন ৫ হাজার ৮১৯ জন, লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৯৫৮ জন এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন ৫৯ জন প্রার্থী। অপরদিকে, অফিস সহায়ক পদে আবেদন করেন ৫ হাজার ২৭০ জন, লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ১ হাজার ৩২৯ জন এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন ৬৫ জন।
আরডিএর মহাপরিচালক ড. এ. কে. এম. অলি উল্যা বলেন, “পরীক্ষা চলাকালে সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ভুয়া প্রমাণিত দুইজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলছে।”
শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নুল আবেদীন বলেন, “নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের চেষ্টায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে থানায় হেফাজতে রাখা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন জানান, “রাত পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, অভিযোগ না থাকলে আটক ব্যক্তিদের নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হবে।”
ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পর আরডিএ ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা–সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ বলছেন, কঠোর নজরদারি না থাকলে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।