বেনাপোল, ১৮ মে: বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজত খাদ্যপণ্য ও গার্মেন্টসসহ সাত ধরনের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। গতকাল (১৭ মে) ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের (DGFT) জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। এতে বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দরে গার্মেন্টস বোঝাই প্রায় ৩৬টি ট্রাক আটকে আছে। বাংলাদেশ থেকে এইসব পণ্য এখন শুধুমাত্র কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, “প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে পোশাক, খাদ্যপণ্য, কেমিকেল, পাটজাত পণ্য, মেলামাইন, টিসু ইত্যাদি রয়েছে। স্থলপথে পণ্য পরিবহন খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই পথ ব্যবহার করে থাকেন। নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক রপ্তানিকারক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির একটি বড় বাজার ভারত। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এই খাত থেকে প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যার ৯৩ শতাংশ স্থলপথে গেছে। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা তৈরি পোশাক খাতে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “যেসব পণ্যের এলসি বা টিটি ইতোমধ্যে হয়েছে, সেগুলোর আমদানি কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে কাস্টমসের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
এদিকে রপ্তানিকারকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সমুদ্রপথে রপ্তানি খরচ এবং সময় বেশি হওয়ায় তাঁদের পক্ষে বিকল্প পথ বেছে নেওয়া খুব কঠিন। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি আসেনি। তবে পত্রপত্রিকায় বিষয়টি আমরা জেনেছি। রোববার সকাল থেকে গার্মেন্টস ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ সম্প্রতি ভারতীয় সুতা আমদানিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। ভারতের এই সিদ্ধান্ত তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে কূটনৈতিক পর্যায়ে দ্রুত আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।