বাগমারা, রাজশাহী: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় এক বেসরকারি এনজিও সংস্থা গ্রাহকদের সঞ্চিত প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ‘আল-বায়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ’ নামের এই সংস্থাটির পরিচালক আক্কাছ আলী মাষ্টার ও তার দুই ছেলে এই ঘটনার মূল হোতা বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এই ঘটনায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন আমানতকারীরা।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায়। রবিবার (১৮ মে) বিকেলে বাগমারা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতারিত গ্রাহকরা এই অভিযোগ করেন এবং স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত সহায়তার আবেদন জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের তেলিপুকুর গাঙ্গোপাড়া গ্রামের আক্কাছ আলী মাষ্টার ভবানীগঞ্জ বাজারে ‘আল-বায়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭-১৮ সালে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে ক্ষুদ্র সঞ্চয় জমা নেওয়ার অনুমতি লাভ করে সংস্থাটি। এরপর আক্কাছ আলী নিজেই সমিতির নির্বাহী ও সভাপতির দায়িত্ব নেন এবং তার ছেলে রায়হান আলী শেখকে সাধারণ সম্পাদক ও ভাগ্নে সোহরাব হোসেনকে ক্যাশিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এক পর্যায়ে আল-বায়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রায় শতাধিক গ্রাহকের জমানো প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে হঠাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যান। এতে অসহায় হয়ে পড়েন আমানত প্রদানকারী সাধারণ মানুষ।
দেউলিয়া গ্রামের আমানতকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘আল-বায়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে পাশ বই ও মানি রিসিভের মাধ্যমে তিন কোটি টাকার আমানত গ্রহণ করে। প্রথম দিকে গ্রাহকদের মুনাফার টাকা নিয়মিত পরিশোধ করে তারা বিশ্বাস অর্জন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে গ্রাহকরা তাদের জমানো টাকা ফেরত চাইলে সমিতি কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করে। গ্রাহকদের চাপের মুখে একসময় তারা অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়।’ অফিস বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে তাদের টাকা ফেরত এবং প্রতারক আক্কাছ আলী শেখ, তার ছেলে রায়হান আলী শেখ ও ভাগ্নে সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আক্কাছ আলী শেখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে আমরা টাকা তুলতে পারছি না, সেই জন্য আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছি না।’
সাংবাদিক সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বাজেকোলা গ্রামের শাহাদৎ হোসেন, মতলেবুর রহমান, মিন্টু, মুনসুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, সেফাতুল্লাহ, মনিরুল ইসলাম, মোছাঃ জোসনা বেগম; উত্তরএকডালা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মোজাহার আলী, সোহেল রানা; ভবানীগঞ্জের মাহাবুর রহমান; হাসানপুরের রফিক; মচমইলের জাকির হোসেন এবং পলাশীর রহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং ভুক্তভোগীরা দ্রুত আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের কষ্টের টাকা ফেরত পাওয়ার আশা করছেন।