শেরপুর (বগুড়া), ১২ মে ২০২৫: বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী টাউনক্লাব পাবলিক লাইব্রেরি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় শিক্ষা অঙ্গনে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কলেজের গভর্নিং বডির দুই সদস্য, পিয়ার হোসেন পিয়ার ও জাহিদুর রহমান টুলু, এই বিষয়ে গত ৭ মে জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই একাধিক গুরুতর অনিয়ম ও স্বচ্ছতার অভাবের কথা জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১০ মার্চ দৈনিক যুগান্তর ও করতোয়া পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গত ৩ মে কলেজে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা বিলম্বে শুরু হয়, যা স্বাভাবিকভাবেই প্রক্রিয়াটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এখানেই শেষ নয়, অভিযোগকারীরা আরও জানান, পরীক্ষার দিন সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করলে তাদেরকেও নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়, যা সুশাসনের নীতির পরিপন্থী।
তবে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি হলো আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত। অভিযোগপত্রে স্পষ্ট দাবি করা হয়েছে যে, কলেজের বর্তমান সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে সিরাজগঞ্জ থেকে আগত এক নির্দিষ্ট প্রার্থীকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। অভিযুক্ত প্রার্থী জাকির হোসেনের অতীত কর্মস্থলেও অর্থ আত্মসাৎ এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মতো গুরুতর অভিযোগ বিদ্যমান বলে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেছেন।
এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া গভর্নিং বডির সদস্য পিয়ার হোসেন পিয়ার ও জাহিদুর রহমান টুলু বলেন, “এই কলেজটি শুধু শেরপুর নয়, সমগ্র অঞ্চলের নারী শিক্ষায় একটি আলোকবর্তিকা স্বরূপ। এখানে যদি এমন নিয়োগ দুর্নীতি হয়, তবে তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তিকেই নড়িয়ে দেবে। আমরা অবিলম্বে এই গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ চাই এবং একটি নতুন, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর জোর দাবি জানাচ্ছি।”
অন্যদিকে, অভিযোগের তীর যাদের দিকে, সেই কলেজের সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা দৃঢ়ভাবে জানান, নিয়োগ বোর্ড যাবতীয় নিয়মকানুন মেনেই পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে।
এই স্পর্শকাতর বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসনের কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ফয়সাল মাহমুদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো প্রকার মন্তব্য করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান।