দিনাজপুর, ২২ মে ২০২৫: দিনাজপুরের হিলিতে সাইকেল চুরির তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক নজিরবিহীন বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি সাইকেল চুরির অভিযোগে প্রতিবেশী সিদ্দিক হোসেনের স্ত্রী ও তার নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করেছেন। এই ঘটনার পর নির্যাতনের শিকার পরিবারটি ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সরগরম হিলি থানা। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে উপজেলার নয়ানগর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত শনিবার (১৭ মে) ফারুক হোসেনের বাড়ি থেকে একটি সাইকেল চুরি হয়। পরের দিন রোববার (১৮ মে) প্রতিবেশী সিদ্দিক হোসেনের বাড়ি থেকে সাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দিলেও, এর রেশ কাটেনি। ফারুকের স্ত্রী ও সিদ্দিকের স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় তুমুল বাগবিতণ্ডা। একপর্যায়ে সিদ্দিক এসে ফারুকের স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান। এই ঘটনায় ফারুক তাৎক্ষণিকভাবে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর ঐদিনই বিকেলে ফারুক ও তার শ্যালকসহ কয়েকজন মিলে সিদ্দিকের স্ত্রী ও তাদের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে। অভিযোগ, এরপর তাদের বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বর্বরভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। মা-মেয়েকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের একটি মর্মান্তিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) ভাইরাল হয়ে পড়েছে, যা দেখে শিলিঙ্গী মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। বর্তমান নির্যাতনের শিকার পরিবারটি লোকলজ্জা ও ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।
সিদ্দিক হোসেনের মা জরিনা বেগম ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমার ছেলে সাইকেল চুরি করেছে, সে চোর, তার শাস্তি হবে। কিন্তু আমার ছেলের বউ আর নাতনি তো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে কেন তারা মা-মেয়েকে জোর করে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্যাতন করলো? আমি এর বিচার চাই।” প্রতিবেশী সূর্য বেগমও এই কাজকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তবে, ফারুক হোসেনের স্ত্রী এলেন বেগম সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলের একটি সাইকেল সিদ্দিক চুরি করে। আমরা জানতে পেরে তার বাড়ি থেকে গ্রামের লোকজনসহ সাইকেলটি উদ্ধার করি এবং বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। পরে এ বিষয়ে সিদ্দিকের স্ত্রী ও তার মেয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। একপর্যায়ে সিদ্দিক আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে।” তিনি আরও দাবি করেন, তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার ভাই বাড়িতে এসে মা-মেয়েকে খুঁটিতে বাঁধেন যেন তারা পালিয়ে যেতে না পারে। পরে গ্রামের লোকজনের অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন জানান, তিনি লোকমুখে ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি বলেন, “আমার ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে একটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি বাদী-বিবাদী কেউ আমাকে জানায়নি। তবে ঘটনা যা-ই ঘটুক, চুরির ঘটনা বা মারামারির বিষয়ে দেশে আইন আছে। সেটা না করে মা-মেয়েকে খুঁটির সাথে বাঁধাটা ঠিক হয়নি।”
হাকিমপুর (হিলি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, উপজেলার নয়ানগর গ্রামে সাইকেল চুরি, মারামারি এবং মা-মেয়েকে খুঁটিতে বেঁধে রাখা নিয়ে উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ করেছে। তিনি আরও জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি উঠেছে।