চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের তেলকুপি সীমান্তে হাবিল নামে এক বাংলাদেশিকে গুলি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। গুলিবিদ্ধ ওই যুবক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আহত যুবকের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, সীমান্ত এলাকায় ভোররাতের দিকে গমের জমিতে পানি দিতে গেলে গুলি করে বিএসএফ। তবে পতাকা বৈঠকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আহত ব্যক্তি চোরাকারবারি বলে জানিয়েছে বিজিবি।
আহতের পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০-২২ বছর আগে আহত হাবিলের বড় ভাই আলম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। একইভাবে জমিতে কাজ করতে গিয়ে আলমের প্রাণ যায় বলে দাবি পরিবারের। আহত হাবিল আলী শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের তেলকুপি লম্বাপাড়া গ্রামের বেলালের ছেলে।
আহত হাবিলের মা, ভাবী ও ভাগনি জানায়, ভোররাত ৪টার দিকে সীমান্ত এলাকায় থাকা ১৫ কাঠা গমে পানি দিতে যায় হাবিল এসময় বিএসএফ ১১৯ গোপালনগর ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়ে। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। কোন ধরনের চোরাচালানের সাথে হাবিল সম্পৃক্ত ছিল না বলে দাবি পরিবারের।
আহত হাবিলের ভাবী ও নিহত আলমের ভাইয়ের বউ সুলেখা খাতুন বলেন, ২০-২২ বছর আগেই সীমান্তে কাজে গিয়েই বিএসএফ গুলি করেছিল আমার ভাসুর আলমের উপর। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এমনকি মরদেহ নিয়ে চলে যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মরদেহ ফেরত দেয়া হয়। এই হত্যাকান্ডেরও বিচার চাই আমরা। স্থানীয়দের দাবি, চোরাচালান করতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ যাওয়ার কথা বললেও অস্বীকার করেন নিহত আলমের ভাইয়ের বউ সুলেখা খাতুন।
নিহত আলমের ভাগনি মৌসুমী খাতুন জানান, আমার মামা গুলিতে মারা যাওয়ার ঘটনা দেখিনি। তবে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শুনেছি, সীমান্ত এলাকায় কৃষি কাজ করতে গিয়ে মারা গেছিলেন। একইভাবে আরেক ছোট মামা হাবিলকে গুলি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। আমরা এসব ঘটনার কোন প্রতিকার বা বিচার পায়না। আমরা চাই, সরকার এমন ঘটনাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুক। আমাদের পরিবারটি শেষ হয়ে গেল বিএসএফের গুলিতে।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ০৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. কাশেদ আলী বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে সীমান্তে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ যায় আলমের। তবে কৃষি কাজ নাকি চোরাচালান করতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। শনিবার ভোররাতে একই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছেন তার ছোট ভাই হাবিল।
এদিকে, এই ঘটনায় বিজিবি-বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। ৫৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানায়, শনিবার আনুমানিক ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধীন তেলকুপি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আনুমানিক ১৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে সাত থেকে আটজন বাংলাদেশি চিহ্নিত চোরাকারবারি চোরাচালানের উদ্দেশে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করলে বিএসএফ টহলদল কর্তৃক তাদেরকে লক্ষ্য করে দুই থেকে তিন রাউন্ড ফায়ার করে। এই ফায়ারের শব্দ শুনে তাৎক্ষণিক বিজিবি টহল দল ঘটনাস্থলে গমন করলে বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা পালিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে বিজিবি জানতে পারে মো. হাবিল নামে একজন চিহ্নিত চোরাকারবারি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, তেলকুপি সীমান্তের পাশের আজমতপুর সীমান্ত গত ১১ জানুয়ারী বিএসএফের গুলিতে আহত হন শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। এ ঘটনাতেও আহত শহিদুল ইসলামকে চোরাকারবারি উল্লেখ করলেও তার পরিবার কৃষি কাজ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করে।