শেরপুর (বগুড়া):
করতোয়ার শান্ত জলের বুকে আজ বয়ে চলছে কান্নার স্রোত। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের রহমান নগর স্কুলপাড়া গ্রামের হিজলা দহ ঘাটে শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে তিন কিশোর নেমেছিল নদীতে গোসল করতে। কিন্তু আনন্দের সেই মুহূর্ত হঠাৎই পরিণত হয় ট্র্যাজেডিতে।
নদীর ঠান্ডা জলে নেমে ছিল—হৃদয় প্রামানিক (১৪), নিরব হোসেন (১২) ও সৌরভ (১০)। তিনজনই ছিল পাড়ার বন্ধু। কিন্তু নদীর হঠাৎ বেড়ে ওঠা স্রোতে তারা ভেসে যায়। স্থানীয়দের প্রাণপণ চেষ্টায় নিরব ও সৌরভকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, হৃদয় আর ফিরে আসেনি।
হৃদয় রহমান নগর গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। গ্রামের মাঠে খেলাধুলা, স্কুল শেষে বন্ধুদের সঙ্গে নদীতে গোসল—এটাই ছিল তার প্রতিদিনের আনন্দ। কিন্তু আজ সেই নদীই কেড়ে নিল তার জীবন।

স্থানীয়রা জানান, কিশোরদের ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। খবর পেয়ে শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি চালায়। পরে রাজশাহী থেকে পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল এসে যোগ দেয় সন্ধান অভিযানে। করতোয়ার স্রোতের সঙ্গে চলছে তাদের লড়াই—একটি প্রাণ ফিরিয়ে আনার আশায়।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের সাব অফিসার নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সবাই মিলে একটি প্রাণের সন্ধানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, শিগগিরই তাকে উদ্ধার করতে পারব।”
অন্যদিকে, শেরপুর থানার ওসি এসএম মইনুদ্দীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, “উদ্ধার অভিযানে পুলিশও সহায়তা করছে। ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
তবে রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত হৃদয়ের কোনো সন্ধান মেলেনি। গ্রামের মানুষজন ঘাটে ভিড় করে আছে—কারও চোখে অশ্রু, কারও মনে আতঙ্ক। করতোয়ার জলরাশি আজ যেন হৃদয়ের নিখোঁজ হওয়ার বেদনায় ভারী হয়ে উঠেছে।