
বগুড়া, ২০ আগস্ট ২০২৫: এক সময়ের খরস্রোতা করতোয়া নদী এখন মৃতপ্রায়, এবং এর ফলে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে মির্জাপুর, সুঘাট, এবং খামাকান্দি ইউনিয়নে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, এবং ফসলি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনজীবন ও অর্থনীতির উপর এর প্রভাব ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালায় তিনটি এবং সুঘাট ইউনিয়নে পাঁচটি পয়েন্টে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেকের বাড়িঘর ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। কৃষকদের ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় জীবিকা হুমকির মুখে। মির্জাপুর-জোড়গাছা আঞ্চলিক সড়কের বড় অংশ ধসে পড়েছে, এবং বাকি অংশে ছোট-বড় ভাঙনের কারণে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গাড়ীদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী বাজারের সড়ক, যা ২০২২ সালে ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়েছিল, তাও এখন ঝুঁকির মুখে। এই সড়কের ১৩০ মিটার অংশ নদীর পাড় ঘেঁষে থাকায় বর্ষার পানির চাপে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এটি এলাকার বৃহত্তম সবজির বাজারের একমাত্র প্রবেশপথ হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
করতোয়া নদীর উৎপত্তি হিমালয় পাদদেশে হলেও, উজান থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীটি কার্যত শুকিয়ে গেছে। এছাড়া, দখল, বাড়ির বর্জ্য ফেলা, খননের অভাব, এবং দূষণের কারণে নদীটি অনেক স্থানে সরু হয়ে পচা ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বর্ষাকালে পানির চাপ সাময়িকভাবে বাড়লেও, তীরে স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় ভ্যানচালক রহিম উদ্দিন বলেন, “সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে ভ্যান চালাতে গেলে মনে হয় পড়ে যাব। ভাঙনের জায়গায় সামান্য ভুল হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবু ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গাইবান্ধা থেকে শেরপুর পর্যন্ত ১২৩ কিলোমিটার নদী খননের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া, ২০২৪ সালে বগুড়া সদর ও শাজাহানপুরে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য গাছও লাগানো হয়েছে। তবে, শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিবারণ চক্রবর্তী বলেন, “তীরে স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙন রোধ করা কঠিন। খনন প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, এবং আমরা দ্রুত কাজ শুরুর আশা করছি।”