এনামুল হক, শেরপুর (বগুড়া):
বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাজার হলো নয়মাইল হাট, যা শেরপুর উপজেলার কোল ঘেঁষে অবস্থিত, এখন পরিণত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম কলা ও সবজির পাইকারি হাটে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ওপর বসা এই ঐতিহ্যবাহী হাটে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। এখানে সপ্তাহে দুই হাটে বিক্রি হয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকার কলা।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ট্রাকভর্তি কলা নিয়ে হাটে ভিড় করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সাজানো কলার সারি যেন এক রঙিন উৎসবের আবহ তৈরি করেছে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে জনপ্রিয় কয়েক জাতের কলা—অনুপম, অগ্নিশ্বর, অমৃতসাগর, জি-৯, চিনি চম্পা। ধোয়া দিয়ে পাকিয়ে সংরক্ষন করেন। দাম দাম কাদি অনুসারে ৫০০-৯০০ টাকা হয়ে থাকে।
এই হাটে কলা আসে আশপাশের মকামতলা, নন্দিগ্রাম ও শেরপুর উপজেলা থেকে। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলের কলা স্বাদে ও গুণে বিখ্যাত। স্থানীয় চাষিরা সরাসরি তাদের উৎপাদিত কলা নিয়ে আসেন হাটে, আর এখান থেকেই তা পাঠানো হয় দেশের নানা প্রান্তে—ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায়।

৪৮ বছর ধরে কলা ব্যবসা করছেন স্থানীয় কৃষক ছানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে এই হাটে আসতাম। এখনো প্রতি হাটে কলা বিক্রি করি। এখানকার দাম ভালো পাওয়া যায়—এখন প্রতি কাইন কলা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এই অঞ্চলের মাটি কলা চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়, তাই এখন অনেকেই কলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।”
ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া জানান, “আমরা এখান থেকে পাইকারি দরে কলা কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। হাটের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা–বিক্রেতায় বাজার থাকে জমজমাট।”
তবে মহাসড়কের ওপর হাট বসায় মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “হাটের দিনগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এতে যাত্রী ও পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।”
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, নয়মাইল হাটের আশপাশের এলাকায় প্রতিবছর প্রায় দেড় শতাধিক একর জমিতে কলা চাষ হয়। প্রতি একর জমি থেকে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কাইন কলা পাওয়া যায়। উৎপাদিত এই কলার বেশিরভাগ অংশ বিক্রি হয় নয়মাইল হাটে। স্থানীয় চাষিরা অল্প খরচে ভালো ফলন পাচ্ছেন, ফলে কলা চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
শাহজাহানপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন শাওন বলেন, উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়, কৃষকদের পানামা ও সিগাটকা রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। কলা চাষে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ত দিতে হবে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছি।”