বগুড়া ও শেরপুরের উপজেলার কৃষকপাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায় দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। বিঘাপ্রতি জমি লিজ নিতে গুনতে হচ্ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। তার উপর চারা লাগানো থেকে ধান কাটা পর্যন্ত খরচ ১০ হাজার থেকে ১০৫০০ টাকা। গত বছর একই জমিতে চাষে খরচ হয়েছিল ৮ হাজার টাকা। এখানেই শেষ নয়, ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। শ্রমিক মিললেও তাদের হাঁকা দাম আকাশছোঁয়া – বিঘাপ্রতি ৪৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা।
এদিকে, শেরপুর ও শাজাহানপুরের হাটে সুবল লতা ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায়। কাটারি ধানের দর ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা। সরু চালের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৩৫০ টাকায়। আর মোটা ধানের দাম ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে।
বগুড়া জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন চাল। শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানাচ্ছে, উপজেলায় ২০৪৮৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। তাদের আশা, উৎপাদন হবে ৮৭ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন চাল। এ পর্যন্ত শেরপুরে ২০৪০ হেক্টর জমিতে ধান কাটা হয়েছে।
কৃষক জিহাদ আহমেদের সরল স্বীকারোক্তি, “নিজের জমি আর নিজের হাতে কামলা দিলে হয়তো পাঁচ হাজার টাকা বাঁচানো যায়। কিন্তু নিজের শ্রম ও সময়ের দাম ধরলে লাভের অঙ্ক যেন প্রায় শুন্য।” তিনি আরো জানান, ফসলের ন্যায্য দাম আর কৃষি উপকরণের সহজলভ্য না হলে, সোনালী ধানের মাঠ হয়তো একদিন খাঁ খাঁ করবে, আর কৃষকের জীবন হয়ে পড়বে আরও দুর্বিষহ।
শেরপুরের কৃষক ইউসুফ আলী জানান, এ বছর আমি ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। জমির লিজ মুল্য বাদ দিলে বিঘা প্রতি ধানের দাম অনুযায়ী লাভ হয়েছে ৪৫০০ টাকা। তবে নিজের শ্রম ধরলে কিছুই থাকে না। সরকার যদি ধান কাটার মেশিন ও কৃষি যন্ত্রাংশ সহজলভ্য করে, তবে এই বাড়তি খরচ কিছুটা হলেও কমানো যাবে।
শেরপুর উপজেলার মির্জাপুরের কৃষক কামরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি ৩০ বিঘা ধান চাষ করেছি, ফলনো ভালো হয়েছে তবে কৃষি অফিস থেকে কেউ আসে না, কোন পরামর্শ পাই নাই। আগামীতে কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে উৎপাদন আরো বাড়বে ও খরচ কিছু কমবে এই আশা ব্যাক্ত করেন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এবং তাদের লোকসান কমাতে কৃষি বিভাগ সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। আমরা আশা করছি, সরকার খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (শস্য) নাজমুল হক মন্ডল জানান, “আমরা মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং রোগ বালাই দমণে কৃষি উপ-সহকারীরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন । কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আমরা আশা করছি, সরকারি সংগ্রহ অভিযান শুরু হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের একটি ভালো দাম পাবেন।”
উল্লেখ্য, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৭.৫ লাখ টন ধান ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান এবং ১৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল কেনা হবে। বোরো ধান সংগ্রহের মূল্য প্রতি কেজি ৩৬ টাকা এবং সেদ্ধ চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।