বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থায় যমুনা নদী যুগ যুগ ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান ধমনী হিসেবে কাজ করে আসছে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে পণ্য পরিবহনের এক সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য পথ হিসেবে যমুনা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের ব্যবসায়িক মহলে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, দেশে ২৪,০০০ কিলোমিটার নদীপথের মধ্যে মাত্র ৫,৯৬৮ কিলোমিটার সারা বছর নৌযান চলাচলের উপযোগী। শুষ্ক মৌসুমে এই দৈর্ঘ্য ৩,৮৬৫ কিলোমিটারে নেমে আসে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যমুনা নদী তার কৌশলগত অবস্থান ধরে রেখেছে, যা বিশেষ করে কৃষিপণ্য ও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে অনন্য ভূমিকা পালন করে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত ধান, গম, পেঁয়াজ, সবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য নদীপথে দেশের প্রধান বাজারগুলোতে, বিশেষ করে রাজধানী ও দক্ষিণাঞ্চলে, সহজে পৌঁছানো যায়। নৌপথে একবারে ৪০-৫০ টন পর্যন্ত মাল পরিবহন করা সম্ভব হওয়ায় পরিবহন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে, যা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক।
মাঝি রাকিবুল হাসান জানান, "এক লিটার ডিজেলে আমাদের নৌকা চলে ৪-৫ কিলোমিটার। একই পথে ট্রাকে খরচ হয় দ্বিগুণেরও বেশি। উপরন্তু নদীতে যানজট নেই, রাস্তা ভাঙে না।" এই তুলনামূলক কম জ্বালানি খরচ এবং সময় সাশ্রয়ী সুবিধা ব্যবসায়ীদের কাছে নৌপথকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
নৌপরিবহন বিশ্লেষক শহিদুল ইসলাম মনে করেন, যমুনা নদীকে কেন্দ্র করে আধুনিক নৌবন্দর, ঘাট ও ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট করিডোর গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি বলেন, "সরকারিভাবে যমুনাকে কেন্দ্র করে একটি নৌলজিস্টিক জোন তৈরি করা গেলে এটি হবে ভবিষ্যতের বড় সম্ভাবনা।" এই ধরনের লজিস্টিক জোন স্থাপন করা গেলে পণ্য সংরক্ষণ, লোড-আনলোড এবং দ্রুত বিতরণের সুবিধা তৈরি হবে, যা দেশের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।
যমুনা নদী শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্র। এর যথাযথ উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে যমুনাকে আরও সুদৃঢ় করতে পারে।