
এনামুল হক, বগুড়া:
প্রচলিত গ্রামীণ প্রবাদ “আশ্বিনে গা করে শিন শিন।” কথাটি যেন হুবহু মিলে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের প্রভাতী প্রকৃতির সঙ্গে। ভোরের আলো ফোটার আগেই ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে গাড়ির ফাঁকে কুয়াশা ঝুলে থাকে নরম পর্দার মতো। বাতাসে মৃদু শিহরণ— যেন দূর হিমালয়ের বরফের শ্বাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে বগুড়া ও শেরপুরের সকাল।
অক্টোবরের শুরুতেই এই অঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে শীতের আগমন বার্তা। গ্রামগঞ্জের মাঠে ভোরে শিশিরভেজা ধানগাছ, পুকুরের ধারে ধোঁয়াটে কুয়াশা, আর ঘরে ঘরে উনুনের ধোঁয়া, সব মিলিয়ে শুরু হয়ে গেছে হিমেল দিনের গল্প।
এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল রেকর্ড পর্যায়ে। সেই বৃষ্টির শেষে দিনের রোদে উষ্ণতা থাকলেও রাত নামতেই মাটি আর বাতাসে নেমে আসছে ঠাণ্ডা পরশ।
বগুড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, “বৃষ্টির প্রভাব কমে গেলেই তাপমাত্রা আরও হ্রাস পাবে। কার্তিক নয়, এবছর আশ্বিনের শেষ থেকেই উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ।”
শীতের খবর পেয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ-তোষক কারিগররা। শহরের গলিতে ও গ্রামীণ হাটে চলছে তুলো ফোলানোর শব্দ, কেউ তৈরি করছেন নতুন লেপ-তোষক, কেউবা দিচ্ছেন পুরনো লেপে নতুন জীবন। বাজারেও উঠেছে আগাম শীতের পোশাক— উলেন শাল, সোয়েটার আর মোটা চাদর।

বাজারে উঠতে শুরু করেছে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, গাজর ও লাউসহ শীতের আগাম সবজি। তবে দাম কিছুটা চড়া। কৃষকরা জানাচ্ছেন, অতিবৃষ্টির কারণে আগাম সবজি আবাদ কিছুটা পিছিয়ে গেছে, বিশেষ করে কাঁচা মরিচের গাছ বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, “গত বছর ১,২৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছিল। এবছরও প্রস্তুতি চলছে, তবে অতিবৃষ্টির কারণে আগাম চাষ কিছুটা দেরি হতে পারে।”
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আলুর দাম কমে যাওয়ায় আগাম আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। তবে কৃষি অফিসের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, “মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত আবহাওয়ার সতর্কবার্তা ও বালাই জরিপের তথ্য কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। রোপা আমন ধানের পরিচর্যা ও আগাম সবজি চাষ বিষয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক চলছে।”
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে নানা রোগব্যাধির ঝুঁকি বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দিনে গরম ও রাতে শীতের পার্থক্যের কারণে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া এবার ডেঙ্গুতে ৩৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিক বলেন, “বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা বেড়েছিল, তবে সরকারের আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতামূলক প্রচারণার ফলে এবার আক্রান্তের সংখ্যা কম। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।”