উত্তরবঙ্গের শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র বগুড়া জেলা তার উর্বর মাটি এবং প্রচুর শস্য উৎপাদনের জন্য পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, জেলাটি প্রতি বছর গড়ে ০.৭% হারে আবাদি জমি হারাচ্ছে, যা জাতীয় গড় (০.২১%) থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এই জমি হ্রাস ঘটছে, যা ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়ার মোট জমির পরিমাণ ২৮৯,৮৮২ হেক্টর, যার মধ্যে আবাদযোগ্য জমি ২২৪,৮৪০ হেক্টর। এর মধ্যে দুই ফসলি জমি ৯০,২০০ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমি ১১১,২৭৫ হেক্টর। জেলার মোট খাদ্য চাহিদা ৫৭৯,৫৭৩ মেট্রিক টন, যেখানে উৎপাদন হচ্ছে ১,৪৪৯,৫৯৮ মেট্রিক টন, ফলে খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে ৭০০,৩৯৩ মেট্রিক টন। প্রধান শস্যের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, গম, আলু, মরিচ এবং সরিষা। বিশেষ করে লাল মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে এটি ১০০ কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, বগুড়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩৯.৯২ লাখ, যার মধ্যে পুরুষ ১৯.৯২ লাখ এবং নারী ২০ লাখ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,২৮৮ জন। ২০১১ সালের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১২.৮%, যা ভূমির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১,৫৭,৮১৪।
বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) জানিয়েছে, দেশের ৮৫% আবাদযোগ্য জমির উর্বরতা কমেছে। কোনো জমিতেই প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন নেই, এবং ৩৮% জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদনের জন্য হুমকি। বিশেষজ্ঞরা জমির পুষ্টি ও উর্বরতা ধরে রাখতে জৈব সার, ফসলের ঘূর্ণন এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মোট জমির পরিমাণ ২৯,৬৪০ হেক্টর, যার মধ্যে আবাদি জমি ২৫,৫৭৮ হেক্টর। এখানে দুই ফসলি জমি ১৬,৫৯০ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমি ৩,৮৭৯ হেক্টর। মোট জনসংখ্যা ৩,৭৭,৫৬১, খাদ্য উৎপাদন ১,৬৪,৬২৭ মেট্রিক টন, এবং খাদ্য চাহিদা ৬৯,৭৪৮ মেট্রিক টন, ফলে উদ্বৃত্ত ৯৪,৮৭৯ মেট্রিক টন।
জেলা পরিসংখ্যান অফিস, বগুড়ার উপপরিচালক জনাব মোঃ সোহেল রানা জানান, “দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাসন এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে ক্রমবর্ধমানভাবে কৃষি জমির উপর চাপ পড়ছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে বিপুল সংখ্যক পরিবারের বাসস্থান নিশ্চিত করতে গিয়ে কৃষি জমি অকৃষি জমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাসের অন্যতম কারণ।”
তবে তিনি আরও উল্লেখ করেন, “কৃষি জমি আপাতত দৃষ্টিতে হ্রাস পেলেও এক ফসলি, দুই ফসলি, তিন ফসলি এবং ততোধিক ফসলি জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষির ফলন বৃদ্ধি দেশে কৃষিজ উৎপাদনে ভারসাম্য এনেছে।”