1. dailybogratimes@gmail.com : admin :
যমুনার ঢেউয়ে গাঁথা দুই মাঝির জীবনের গল্প - Daily Bogra Times
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন

যমুনার ঢেউয়ে গাঁথা দুই মাঝির জীবনের গল্প

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময়ঃ বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
  • ৩১ Time View
যমুনার ঢেউয়ে গাঁথা দুই মাঝির জীবনের গল্প
print news

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের নদীতীরে ভোরের আলো ফুটতেই যমুনার ঢেউয়ের মৃদু ছলাৎ শব্দে জেগে ওঠে একটি গল্প। এ গল্প শুধু নদীর নয়, এ গল্প রাকিবুল হাসান ও সাজ্জাদ হোসাইন নামের দুই মাঝির, দুই জীবনযোদ্ধার। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে তারা যমুনার বুকে নৌকা বাইছেন, যেন নদীর জল তাদের শিরায় শিরায় মিশে গেছে

ছোটবেলা থেকেই নদী তাদের ডেকেছে। প্রথমে ছিল ছোট্ট কাঠের নৌকা, যার ওপর দাঁড় টানতে টানতে তারা শিখেছে জীবনের হিসাব। সময়ের সঙ্গে বড় হয়েছে স্বপ্ন, বেড়েছে সংসারের দায়িত্ব। এখন তারা চালান স্টিল বডির বিশাল নৌকা, যা ৪০ টন মাল বহন করে। ৭ লাখ টাকার এই নৌকা তাদের পরিবারের রুটি-রুজির ভরসা। “নৌকা শুধু বাহন নয়, এটা আমাদের ঘর, আমাদের সংসার,” রাকিবুলের কণ্ঠে গর্ব আর ভালোবাসা মিশে আছে।

প্রতিদিন ভোরে ঘাটে এসে নৌকা ছাড়ার প্রস্তুতি নেন তারা। দুজনের হাতের কাজ এতটাই তাল মিলিয়ে চলে, যেন তারা নৌকারই একটি অংশ। আশপাশের চরে একদিনের ভাড়ায় আয় আসে ৩,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকা। আর দূরপাল্লার যাত্রায় রংপুর-কুড়িগ্রাম কিংবা বরিশাল ৫ থেকে ৮ দিনের পথে আয় হয় ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা। খরচ বাদ দিলে দিনে ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা হাতে থাকে। তবুও সাজ্জাদের মুখে শান্তির হাসি “যত ক্লান্তিই আসুক, নদী কখনো ফাঁকি দেয় না।”

নৌকায় গোসল, শৌচের ব্যবস্থা আছে। দীর্ঘ যাত্রায় এগুলো এখন তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। প্রতি দুই-তিন বছর পর পর নৌকার সার্ভিসিং লাগে, যার খরচও মাঝিদের কাঁধে। ডিজেলে সাশ্রয়ী তাদের নৌকা, এক লিটারে চলে ৪-৫ কিলোমিটার। আগে মাঝরাতে ডাকাতের ভয়ে নদীর মাঝখানে নৌকা থামাতে হতো। এখন পুলিশের টহল বাড়ায় নিরাপত্তা বেড়েছে।

শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমে গেলেও নৌকা চলে, চলতেই থাকে যেমন চলে তাদের জীবন। রাকিবুলের পরিবার নৌকাকেন্দ্রিক জীবনে জড়িয়ে গেছে, পাশাপাশি তারা অন্য ব্যবসাও করে।

কথার ফাঁকে জিজ্ঞেস করি, “নদীর জীবন কি ক্লান্ত করে?” রাকিবুলের চোখে এক মুহূর্তের নীরবতা। তারপর বলেন, “নদী শান্ত, আবার রুক্ষ। তবুও এটাই আমাদের ভালোবাসা। নদী না থাকলে আমরা থাকতাম না।”

Screenshot 3

বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন নৌপরিবহন সুত্রে জানা যায়, নদী মাতৃক বাংলাদেশে সত্তর দশক পর্যনত্দ নৌপথ ছিলো যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণের প্রধান মাধ্যম। তখন এদেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৮ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট নৌপথের দৈর্ঘ্য ২৪,০০০ কিমি হলেও নৌপরিবহনযোগ্য নৌপথের দৈর্ঘ্য মাত্র ৫৯৬৮ কিমি তাও সেটি আবার শুষ্ক মৌসুমে কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩,৮৬৫ কিমি।

সড়কের তুলনায় নৌপথে খরচ কম কিনা এ বিষয়ে রাকিবুল হাসান বলেন, “একটা ট্রাকে যা মাল যায়, সেই একই পরিমাণ বা তারচেয়ে বেশি মাল নৌকায় একবারেই নেওয়া যায়। শুধু ভাড়াই না, জ্বালানি খরচেও অনেক পার্থক্য।”

সাজ্জাদ হোসাইন যোগ করেন, “নৌকায় এক লিটার ডিজেলে ৪-৫ কিলোমিটার চলে। ট্রাকে তো এই খরচ দ্বিগুণের বেশি। আর নদীতে তো যানজট নেই, রাস্তাও ভাঙে না। মালিকরাও এখন বুঝে গেছে-নৌপথই লাভের পথ।”

সাজ্জাদ আরও বলেন, “অনেকে ভাবে নদীপথ ধীরে চলে, সময় বেশি লাগে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা যেমন খারাপ, সময় তো প্রায় কাছাকাছিই পড়ে। উপর থেকে শুনতে আলাদা মনে হয়, কিন্তু যারা নিয়মিত কাজ করে, তারা জানে নৌপথই সস্তা।”

তুলনামূলক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খরচ কম হয় রেলপথে। এর চেয়ে বেশি খরচ পড়ে নৌপথে। সবচেয়ে বেশি সড়ক পথে।

যমুনার বুকে প্রতিদিন এমন অসংখ্য গল্প জন্ম নেয়। রাকিবুল-সাজ্জাদদের মতো মাঝিদের হাতে টিকে আছে নদীর নৌ-সঞ্চালন। তাদের জীবনের নিঃশব্দ কিন্তু শক্তিশালী গল্প যেন যমুনার ঢেউয়ের সঙ্গে বয়ে চলে, চিরকাল।

শেয়ার করুন

আরো খবর দেখুন
© All rights reserved © Daily Bogra Times/2025
Theme Customized BY LatestNews