
শেরপুর (বগুড়া):
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের চন্দিজান গ্রামে এখন প্রকৃতি যেন সবুজ আর সোনালি রঙে নিজেকে সাজিয়েছে। রাস্তার দু’পাশে দীর্ঘদিনের পতিত জমি এখন মাশকালাইয়ের ক্ষেতে রূপান্তরিত হয়ে দিগন্তজুড়ে ছড়িয়েছে জীবনের নতুন সুর। সোনালি ফুলের মায়াবী সৌন্দর্য আর সবুজ পাতার সমারোহে কৃষকদের মুখে ফুটেছে আশার হাসি, হাতে এসেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
সরেজমিনে চোখে পড়ে, ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকরা এই অনাবাদি জমিতে মাশকালাইয়ের বীজ বুনে অল্প পরিশ্রমেই পাচ্ছেন প্রচুর ফলন। এই ফসলের জন্য সেচ বা সারের প্রয়োজন নেই, শুধু বৃষ্টির জলেই বেড়ে ওঠে এই সবুজ স্বপ্ন। ফলস্বরূপ, কৃষকদের ঘরে আসছে বাড়তি ফসল ও আয়ের নিশ্চয়তা।
কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেন, “আগে এই জমিগুলো ফাঁকা পড়ে থাকত, কোনো কাজে লাগত না। এখন মাশকালাই চাষ করে আমরা দারুণ ফলন পাচ্ছি। খরচ নেই বললেই চলে, আর লাভ তো বেশ ভালো!”
মফিজ উদ্দিন নামে আরেক কৃষক জানান, “পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকি ফসল বাজারে বিক্রি করি। এতে সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা, হাতে এসেছে বাড়তি টাকা।”
কৃষক রফিকুল ইসলামের কণ্ঠেও একই আনন্দ। তিনি বলেন, “মাশকালাই চাষে কোনো সেচ বা সার লাগে না। বৃষ্টির জলেই ফসল বেড়ে ওঠে। এটা আমাদের মতো গরিব কৃষকদের জন্য যেন প্রকৃতির আশীর্বাদ।”
কৃষিবিদরা জানান, মাশকালাই চাষে জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বা ‘জো’ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগস্টের শেষ থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর এই চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। বৃষ্টিনির্ভর এই মৌসুমে ফসল ভালো হয় এবং জাতভেদে প্রতি হেক্টরে ১.০ থেকে ১.৬ টন ফলন মেলে।
মাশকালাই শুধু ফসল নয়, পুষ্টির ভাণ্ডার। এতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও খাদ্যশক্তি, যা মানুষের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া, এর খোসা ও গাছ পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি আয়ের পথ খুলে দেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তার ধারে পতিত জমিতে এমন চাষাবাদ অব্যাহত থাকলে কৃষকদের আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি এলাকার সবুজায়ন বাড়বে, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই উদ্যোগ টেকসই কৃষির একটি অনুপ্রেরণাদায়ক মডেল হিসেবে গড়ে উঠছে, যা অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও পথ দেখাতে পারে।