বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই রোগীর ঢল। ৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে চলছে ৩১ শয্যায়। মাসে বহির্বিভাগে ২৬ হাজার, জরুরি বিভাগে ৪ হাজার ও আন্তঃবিভাগে ১ হাজারের বেশি রোগী সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু এই বিশাল চাপ সামলাচ্ছেন মাত্র ১০ জন চিকিৎসক।
জনবল কাঠামো অনুযায়ী ২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা। ২০১৮ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও চিকিৎসক না বাড়ায় সম্প্রসারণ কাগজে-কলমেই আটকে আছে। ফলে ওয়ার্ড, করিডোর, বারান্দা—সর্বত্র রোগী। বিছানার দ্বিগুণ-তিনগুণ রোগী মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শুধু শেরপুর নয়, ধুনট, নন্দিগ্রাম, শাহজাহানপুর, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর-তারাশের মানুষ ছুটে আসেন এখানে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের দুর্ঘটনায় আহতরাও প্রথম আশ্রয় নেন এই হাসপাতালে। প্রতিদিন জরুরি বিভাগে ১৫০-২০০ রোগী: জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, গর্ভবতী পরীক্ষা, দুর্ঘটনা—থামাহীন।
২০১৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু কাগজের অনুমোদন বাস্তবে এসে থমকে গেছে; এখনও ৩১ শয্যার সীমাবদ্ধতাই টেনে বেড়াচ্ছে পুরো ব্যবস্থাকে। ২০২৫ সালের শুরুতে অনুমোদন মিললেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় সম্প্রসারিত কাঠামো চালু করার পথেও এসেছে বাধা। মাসিক পরিসংখ্যান বলছে, এখানে বহির্বিভাগে গড়ে ২৬ হাজার রোগী সেবা নেন, জরুরি বিভাগে ৪ হাজারের বেশি। আন্তঃবিভাগেও থাকে ১ হাজারের বেশি রোগী। সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৬ জন, মিডওয়াইফ ৪ জনসহ অন্যান্য বিভাগে সীমিত জনবল থাকলেও চিকিৎসকের অভাব পুরো ব্যবস্থাকেই করছে ক্লান্ত। তবে উপ- সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ( স্যাকমো) এর কোন সংকট নেই বলে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিছানার তুলনায় দ্বিগুণ-বেগুণ রোগী ভর্তি। কারো জায়গা হয়েছে মেঝেতে, কারো জায়গা বারান্দায়। আর এই ভিড়ের মধ্যেই ডাক্তার ও নার্সরা ছুটছেন ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে, ঘুম–বিরতি ভুলে মানুষের সেবা দিতে। তবুও রোগীরা হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট। পরিচ্ছন্নতা, আলো-বাতাস, লাইট–ফ্যান—সবকিছুই যথেষ্ট ভালো।
সেবা নিতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, “ডাক্তার কম, কিন্তু সেবা দেওয়ার আন্তরিকতা আছে।” ধুনট মোড়ের সুননের ভাষায়, “রোগী বেশি হলেও চিকিৎসা ভালোই পাচ্ছি।”
গর্ভবতী রোগী রোকেয়া বলেন, “নারীদের জন্য আলাদা সুবিধা আছে। কিন্তু ডাক্তার বাড়ানো খুব জরুরি।”
একজন চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন জরুরি বিভাগে ১৫০–২০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন—জ্বর, ডায়রিয়া, শিশু নিউমোনিয়া, গর্ভবতী নারীর পরীক্ষা, দুর্ঘটনায় আহত রোগী—দিনভর থামাহীন চাপ।
এক সিনিয়র নার্সের ভাষায়, “রোগীর চাপ এত বেশি যে প্রতিদিনই অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। চেষ্টা করি যেন কেউ সেবা ছাড়াই ফিরে না যায়।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, “চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবায় চাপ বাড়ছে। আউটডোরে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী আসেন। আরও চিকিৎসক প্রয়োজন—বিষয়টি জানানো হয়েছে, আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।”