বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের কেল্লাপোশী এলাকায় রবিবার (২৫ মে) থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোশী মেলা। এ মেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় সোমবার থেকে। এবার ৪৬৯ বছরে পা দিতে চলেছে এই মেলা। তবে সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে এই মেলার ঐতিহ্য ও পুরনো প্রথা।
স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মাদারের মেলা’ ও ‘জামাইবরণ’ মেলা নামেও পরিচিত। মেলাকে কেন্দ্র করে শ্বশুরেরা জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। মেলা উপলক্ষে জামাইদের মোটা অঙ্কের সেলামি দিয়ে থাকেন শশুররা। তখন জামাইরাও সেই সেলামি আর নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে মেলা থেকে বড় মাছ ও মাটির পাতিল ভর্তি মিস্টি কিনে আনেতেন শ্বশুরবাড়িতে। এছাড়া শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে মেলা ঘুরে ঘুরে দেখাতেন, সার্কাস, বিচিত্রা, নাগোরদেলা, মোটরসাইকেল খেলা, জাদু খেলা, পুতুল নাচ দেখিয়ে দিনব্যাপী আনন্দ শেষে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরতেন। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে কেল্লা পশি মেলার সেই চিরচেনা রুপ। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে জীবনধারা শহরমুখী হওয়ায় মানুষ ভুলে যেতে বসেছে মেলা কেন্দ্রিক সেই হারানো প্রথা ও ঐতিহ্য। এখন বারো মাস লেগেই থাকে নানা ধরনের উৎসব। এছারাও হাতের নাগালেই মিলে সব ধরনের পণ্য।
এ মেলায় সার্কাস, বিচিত্রা নাগোরদোলা, পুতুল নাচ,মোটরসাইকেল খেলা, নৌকা, শিশুদের জাম্পিং, কারখেলাসহ নানা অনুষ্ঠান চলে। সেই সঙ্গে জুয়াড়িরা পাল্লা দিয়ে মেলা দেখতে আসা সহজ সরল মানুষকে ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। দূর-দূরান্ত থেকে এসে বিক্রেতারা এখানে দোকানের পশরা সাজিয়ে বসেন। মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটার মহাধুম।
কেল্লাপোশী মেলার ইতিহাস সুত্রে ও স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের থেকে জানা যায়, ইংরেজি ১৫৫৬ সালে এই মেলার সূচনা হয়। সেই সময় বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ঔরসজাত পুত্র গাজী মিয়া ও দত্তক পুত্র কালু মিয়া রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির-সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণ নগরে আসেন। সেখানে রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজী মিয়াকে দেখে মুগ্ধ হন এবং তাদের মধ্যে প্রেম গড়ে ওঠে। গাজী ও চম্পাবতীর সেই শুভ পরিণয় হয়েছিল জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রবিবার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দুর্গে লাল নিশান উড়িয়ে ৩ দিনব্যাপী চলে আনন্দ উৎসব।
শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘মেলায় কোনো ধরনের অশ্লীল যাত্রা, বিচিত্রা, জুয়া বা অনৈতিক কার্যক্রম চলবে না। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’