1. dailybogratimes@gmail.com : admin :
ভারতের উপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, কপাল খুলছে বাংলাদেশের - Daily Bogra Times
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
উত্তরাঞ্চলের কলা রাজধানী নয়মাইল হাট, সপ্তাহে বিক্রি ২০ লক্ষ টাকা বগুড়ার ৭ উপজেলা সড়ক দুর্ঘটনার হটস্পট ধান কেটে আলুর মাঠে কৃষক, আগাম আলুর সঙ্গে নতুন প্রত্যাশা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উদ্যোগে শেরপুরে এএমআর সচেতনতা কর্মসূচি শেরপুরে চেম্বারে ঢুকে হামলা, ডাক্তারের হাতে ডাক্তার আহত! শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল হেলপারের শেরপুরে নবাগত ইউএনও’র সঙ্গে আদিবাসী ছাত্র পরিষদের শুভেচ্ছা মেধার লড়াইয়ে শীর্ষে শেরউড, এইচএসসি ফলাফলে মিশ্র ছবি শেরপুরে শেরপুরে নতুন ইউএনও মনজুরুল আলমের দায়িত্ব গ্রহণ দুর্নীতির দায়ে শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান সাময়িক বরখাস্ত

ভারতের উপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, কপাল খুলছে বাংলাদেশের

নিউজ ডেস্কঃ-
  • আপডেট সময়ঃ বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ১২৪ Time View
ভারতের উপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, কপাল খুলছে বাংলাদেশের
print news

ঢাকা, ৬ আগস্ট ২০২৫: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর হতে পারে। এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে

ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা প্রধানত ভারতের রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ক্রয় এবং উচ্চ শুল্কনীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভারত মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে এবং রাশিয়ার তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে পরোক্ষভাবে অবদান রাখছে। ফলে, ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের উপর বর্তমানে গড়ে ১৫.৬২ শতাংশ শুল্ক রয়েছে, যা ভারতের তুলনায় কম। এর আগে বাংলাদেশের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হলেও, সম্প্রতি তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা ভারতের ২৫ শতাংশের তুলনায় এখনও সুবিধাজনক।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি বলেন, “ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের তৈরি পোশাক খাতে এখনও উল্লেখযোগ্য অব্যবহৃত ক্ষমতা রয়েছে, যা কাজে লাগিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরও বেশি অংশ পেতে পারি।”

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর উপর উচ্চ শুল্কের কারণে মার্কিন ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক বলেন, “চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। ভারত ও চীনের উপর শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ যদি এর একটি অংশও নিজের দিকে আনতে পারে, তাহলে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। তবে, ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের উৎপাদন দক্ষতা ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।”

তবে, কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার সৃষ্টি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা বাড়লে এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করতে পারে।”

বাংলাদেশ সরকার এই সুযোগ কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছে, যারা শুল্ক কমানো এবং বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে, তাহলে এই শুল্ক যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৈরি পোশাক খাতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশ এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে সক্ষম হবে।”

অপরদিকে, ভারত সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ককে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধির জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই শুল্ক আরোপ একতরফা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যুক্তরাষ্ট্র নিজেও রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরেনিয়াম ও সার আমদানি করছে, তাই এই পদক্ষেপ দ্বিমুখী নীতির বহিঃপ্রকাশ।”

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এই শুল্কের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ দায়ের করার কথা বিবেচনা করছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “আমরা এই শুল্কের প্রভাব বিশ্লেষণ করছি এবং প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ভারত ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্য, যেমন আপেল, বাদাম ও ইস্পাতের উপর শুল্ক বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, রাশিয়া থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে তেল কেনা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহের পরিবর্তনের কারণে ভারত বৈচিত্র্যময় জ্বালানি উৎসের উপর নির্ভর করছে, যা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

ভারতীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলো, যেমন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (এফআইইও), এই শুল্কের ফলে রপ্তানি খাতে ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এফআইইও’র সভাপতি অশ্বিনী কুমার বলেন, “এই শুল্ক ভারতীয় পণ্য, বিশেষ করে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যাল ও প্রযুক্তি পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এই প্রভাব কমানোর জন্য।”

এদিকে, ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস এই শুল্ক আরোপকে মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে বলেছেন, “আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান দুর্নীতি তদন্তের কারণে মোদি সরকার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারছে না। এটি ভারতের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী।” তবে, এই দাবির পক্ষে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

সামগ্রিকভাবে, ভারত এই শুল্ক আরোপকে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক এবং জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে তার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। এই পরিস্থিতি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

শেয়ার করুন

আরো খবর দেখুন
© All rights reserved © Daily Bogra Times/2025
Theme Customized BY LatestNews