শেরপুর বগুড়া: বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ভবানীপুর শক্তিপীঠ বর্তমানে হাজার হাজার ভক্তের পদচারণায় মুখরিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক পবিত্র তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত এই স্থানটি, বিশ্বাস করা হয় যে দেবী সতীর দেহাংশ এখানে পতিত হয়েছিল। এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব এবং বিভিন্ন উৎসবের কারণে এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত।
ভবানীপুর শক্তিপীঠের ইতিহাস জড়িয়ে আছে অসংখ্য কিংবদন্তির সঙ্গে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘শাঁখা-পুকুর’-এর অলৌকিক কাহিনি। লোককথা অনুযায়ী, এক শাঁখাওয়ালার কাছে শাঁখা কেনার পর এক কিশোরী, যিনি নিজেকে নাটোর রাজপরিবারের রাজকন্যা বলে পরিচয় দেন, টাকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে অলৌকিকভাবে পুকুর থেকে দেবী মায়ের হাত উঠে শাঁখা গ্রহণ করলে এই স্থানটির মহিমা ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে এই পুকুর পবিত্র হিসেবে গণ্য হয় এবং ভক্তরা এখানে স্নান করে থাকেন।

চার একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই মন্দির চত্বরে রয়েছে মূল মন্দির, চারটি শিব মন্দির, পাতাল ভৈরব মন্দির, গোপাল ও বাসুদেব মন্দির এবং একটি নাটমন্দির। প্রতিদিন এখানে প্রভাতী ও বাল্যভোগ, দুপুরের অন্নভোগ এবং সন্ধ্যায় আরতি অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আসা ভক্তরা পূজা দিয়ে প্রসাদ গ্রহণ করেন। ভক্ত সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, “আমি শৈশব থেকে এই মন্দিরে আসি। মাঘী পূর্ণিমার মেলায় পরিবার নিয়ে পূজা দিই। মা ভবানী মানত পূর্ণ করেন, এটি আমার বিশ্বাস।”
বছরজুড়ে এই মন্দিরে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে মাঘী পূর্ণিমা, শারদীয় দুর্গাপূজা, দীপান্বিতা শ্যামাপূজা এবং নবান্ন উৎসব উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে মাঘী পূর্ণিমার মেলায় হাজারো ভক্তের সমাগম ঘটে, যা স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিপ্লব চন্দ্র সাহা বলেন, “মেলায় বিপুল লোকসমাগম হয়, এতে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয়। ভক্তদের পদচারণায় এলাকা উৎসবে মুখরিত থাকে।”
এই মন্দিরের আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ‘ক্ষীর তক্তি’ নামক একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন, যা বগুড়ার সীমানা ছাড়িয়ে সারাদেশে জনপ্রিয়।
বর্তমানে মন্দিরটি ভবানীপুর মা ভবানী মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে, যার সভাপতি বগুড়া জেলা প্রশাসক এবং সদস্য সচিব শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ভক্তদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।