1. dailybogratimes@gmail.com : admin :
বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার : এক ডকুমেন্টারি, হাজারো প্রশ্ন - Daily Bogra Times
রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম

বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার : এক ডকুমেন্টারি, হাজারো প্রশ্ন

নিউজ ডেস্কঃ-
  • আপডেট সময়ঃ শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৮৩ Time View
বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার : এক ডকুমেন্টারি, হাজারো প্রশ্ন ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন
print news

শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর। ব্রিটিশ সাংবাদিকতার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় যোগ হলো। ফিনান্সিয়াল টাইমস (FT) তাদের গভীর অনুসন্ধানী ডকুমেন্টারি Bangladesh’s Missing Billions: Stolen in Plain Sight প্রকাশ করল। আলো-আঁধারের খেলায় যেন হঠাৎ করেই দৃশ্যমান হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির এক গোপন ক্ষত। এই ডকুমেন্টারি কেবল কিছু পরিসংখ্যান নয়, বরং এক দীর্ঘ নীরবতার করুণ সুর, যা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের আর্তনাদে।

এই অঙ্কটি যেন কোনো সাধারণ সংখ্যা নয়, বরং প্রতিটি শূন্যে মিশে আছে দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অসংখ্য মানুষের স্বপ্নভঙ্গের গল্প। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল—দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তিগুলোকে ধসিয়ে দিয়েছে।

ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে অর্থ পাচারের কিছু অভিনব পদ্ধতি। কখনো তা ওভার-ইনভয়েসিং ও আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মতো জটিল আর্থিক কারসাজি, আবার কখনো হুন্ডির মতো পুরোনো কিন্তু প্রভাবশালী ব্যবস্থা। লন্ডনের অভিজাত রিয়েল এস্টেট বাজারে যখন বেনামি অর্থ বিনিয়োগ হয়, তখন তা কেবল একটি অর্থনৈতিক লেনদেন থাকে না, বরং তা হয়ে ওঠে এক নৈতিক প্রশ্নের প্রতীক।

তবে এই ডকুমেন্টারি কেবল অর্থ পাচারের কথা বলেই থেমে থাকেনি, বরং এর পেছনে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামও উন্মোচন করেছে। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম উঠে আসার বিষয়টি এই গল্পকে আরও জটিল করে তুলেছে। অন্যদিকে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি থাকার অভিযোগটি যেন দুর্নীতির গভীর শিকড়েরই ইঙ্গিত দেয়।

এই অভিযোগগুলো কেবল ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি পুরো ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ব্যাংক দখলের মতো গুরুতর অভিযোগগুলো প্রমাণ করে, অর্থ পাচারের এই খেলা কেবল কিছু ব্যক্তির লোভ নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির এক ভয়ঙ্কর চিত্র।

ডকুমেন্টারি প্রকাশের পর দেশে ও বিদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদল এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিলেও, অন্যদল একে দেখছে এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীরবতাও এই পরিস্থিতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এত বিশাল অঙ্কের টাকা ফেরত আনা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, দেশের মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারণ, এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কেবল হারানো টাকা নয়, এটি আমাদের হারানো আস্থা, আমাদের হারানো সম্ভাবনা। এই ডকুমেন্টারি যেন একটি আয়না, যা আমাদের নিজেদেরকেই প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে: আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎকে এভাবেই হারিয়ে যেতে দেব?

শেয়ার করুন

আরো খবর দেখুন
© All rights reserved © Daily Bogra Times/2025
Theme Customized BY LatestNews