বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঘৌড়দৌড় মাদ্রাসার পাশে, করতোয়া নদীর বুকে নির্মিত একটি ব্রিজ নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই সেতুর স্বপ্ন ছিল গ্রামবাসীর জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনার, কিন্তু সংযোগ সড়কের অভাবে সেই স্বপ্ন এখন বিষাদের ছায়ায় ঢাকা। দুই হাজারেরও বেশি মানুষের জীবনযাত্রা এখন দুর্ভোগের কবলে। রাস্তার অভাবে ভেঙে যাচ্ছে বিয়ের সম্পর্ক, বন্ধ হচ্ছে নামাজে যাওয়া, স্কুল-মাদ্রাসার পথে বাধা, এমনকি কবরস্থানে প্রিয়জনের শেষযাত্রাও হয়ে উঠছে দুরূহ।
করতোয়া নদীর পূর্ব পাড়ের পানি ব্রিজের নিচ দিয়ে গড়িয়ে চলে। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই এই পথ ডুবে যায় জলের তোড়ে। বন্যার আঘাতে রাস্তা হয়ে ওঠে অচল, যাতায়াত হয়ে পড়ে দুঃস্বপ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া হতাশ কণ্ঠে বলেন, “ব্রিজের কাছে সুইচ গেটের কারণে বন্যা হলে সব ডুবে যায়। ফসলি জমি, রাস্তা—সব শেষ। এই রাস্তার কারণে আমাদের মেয়েদের ভালো বিয়ে হচ্ছে না। সুইচ গেট খুলে দিলে অনেক সমস্যার সমাধান হতো।”
সাইফুল ইসলাম কবিরাজের কণ্ঠে একই বেদনা, “বৃষ্টি হলে পথ ডুবে যায়। এপার-ওপার যাওয়া বন্ধ। আত্মীয়-স্বজনের দেখা মেলে না। বিয়ের সম্পর্কও ভেঙে যাচ্ছে।” আলহাজ্জ হারুনুর রশিদ যোগ করেন, “নামাজে যাওয়া, বাচ্চাদের স্কুল-মাদ্রাসায় পড়তে যাওয়া, কবরস্থানে লাশ নিয়ে যাওয়া—সবই এখন কষ্টের। একটি রাস্তা হলে আমাদের জীবন বদলে যেত।”

সংযোগ সড়কের অভাবে গ্রামবাসীকে অস্থায়ী বাঁশের চরার ওপর দিয়ে পারাপার করতে হয়। এই চরা শুধু অসুবিধাজনক নয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ায়। স্থানীয় মেম্বার পদপ্রার্থী আফজাল হোসেন বলেন, “বাঁশের চরায় পার হতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।” এক নারী বাসিন্দার কথায় উঠে আসে গভীর কষ্ট, “চরায় উঠতে ভয় লাগে, কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়া তো আরও কঠিন।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, ত্রাণ প্রকল্পের আওতায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে সংযোগ সড়কের মাটি ভরাটে দেরি হয়েছে।
খামারকান্দি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান মিলন আশ্বাস দিয়ে বলেন, “ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষার কারণে মাটি ভরাটে সমস্যা হয়েছে। তবে ঠিকাদাররা সাত দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার বলেন, “ব্রিজের কাজ সম্পন্ন। সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। ভারী বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে, তবে দ্রুতই শেষ হবে।”
গ্রামবাসীর দুর্দশা লাঘবে কিছু পদক্ষেপ জরুরি। সুইচ গেটের সঠিক ব্যবস্থাপনা, দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ, এবং নিম্নাঞ্চলের জন্য উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় নতুনপাড়ার মানুষের জীবনে ফিরতে পারে স্বস্তির হাওয়া।