শেরপুর (বগুড়া): বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের কদিমুকুন্দ মৌজার বাগমারা গ্রামের হাটদীঘি পুকুরপাড়ে গত তিন মাস ধরে রাত নামলেই নেমে আসছে আতঙ্ক। প্রায় ৪০টি ভূমিহীন পরিবার, যারা ১৯৮৮ সালে নদীভাঙনের শিকার হয়ে এখানে বসতি গড়েছিল, তারা প্রতি রাত কাটাচ্ছে চরম উৎকণ্ঠা আর ভয়ে।
প্রায় ১১ একর ১৬ শতক আয়তনের হাটদীঘি পুকুর ও এর পাড়ের মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে, যা ইতোমধ্যে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। স্থানীয় শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র মাহাতো দাবি করেন, এই পুকুর ও পাড় তাদের পারিবারিক সম্পত্তি এবং আদালতের রায়ও তাদের পক্ষে। তিনি জানান, তিন মাস আগে কিছু ব্যক্তি পুকুরটি লিজ নেওয়ার প্রস্তাব দেয়, কিন্তু তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।
অন্যদিকে, পুকুরপাড়ের বাসিন্দা মনির হোসেন (৬০) অভিযোগ করেন, সুভাষ চন্দ্রের লোকজন তাদের উচ্ছেদ করতে ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে তার বাড়িতে আগুন দেয়। এছাড়া, ৯ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হন এবং বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনাগুলো নিয়ে উভয় পক্ষের চারটি মামলা শেরপুর থানায় তদন্তাধীন।

১৯৮৮ সালে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা থেকে নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে এই পুকুরপাড়ে বসতি গড়া পরিবারগুলো দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে শান্তিতে বসবাস করছিল। সে সময় স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় তারা জায়গা পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন করেছিল। কিন্তু গত তিন মাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
মনোয়ারা বেগম, মঞ্জিলা বেগম ও গুলবানু বেগম জানান, রাতে অচেনা লোকজনের গালিগালাজ ও টর্চলাইটের আলোর কারণে তারা এক ঘরে জড়ো হয়ে জেগে থাকেন।
বাসিন্দা আবদুল হামিদ ও আনোয়ার হোসেন বলেন, পুকুরপাড়ের রাস্তা এতই সরু যে পুলিশ দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। তাই দুষ্কৃতকারীরা নির্বিঘ্নে মহড়া দেয়। আমরা শুধু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চাই।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন জানান, চারটি মামলা তদন্ত চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় বিশেষ নজরদারি রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে এই বিরোধ আরও বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন, ভূমি অফিস ও সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় বিরোধ নিরসন এবং ভূমিহীনদের জন্য বিকল্প বসতভূমির ব্যবস্থা জরুরি।