এনাম হক:
দেশের সড়ক যেন প্রতিদিন নতুন কোনও বিপদ আরোপ করছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের ৩১৪টি উপজেলা ও থানা দুর্ঘটনাপ্রবণ, যার মধ্যে ১৩৯টি ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’। উত্তরাঞ্চলের বগুড়া জেলা বিশেষভাবে নজরে এসেছে। জেলার শেরপুরসহ সাতটি উপজেলা—শেরপুর, বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, কাহালু, আদমদীঘি ও নন্দীগ্রাম। আজকের বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও নিজস্বভাবে সংগৃহীত ৩৭ হাজার সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন শনিবার (২৫ অক্টোবর) এক বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, দেশে মোট ৩১৪টি উপজেলা ও থানা সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ, যার মধ্যে ১৩৯টি অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এবং ১৭৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশে ১৩৯ টি অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার মধ্য থেকে ২১টি উপজেলা বা থানাকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তালিকায় উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা। এছারাও শাজাহানপুর, বগুড়া সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, কাহালু, আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম রয়েছে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার তালিকায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর, শাজাহানপুর ও বগুড়া সদর অংশ সবচেয়ে বিপজ্জনক। দ্রুতগামী বাস ও ট্রাক, মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চালনা, রাস্তার পাশে হকার ও স্কুল, আর ফুটপাতবিহীনের পথচারী, সব মিলিয়ে এই সড়ক যেন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা দিয়ে চলে গেছে দেশের অন্যতম ব্যস্ত বগুড়া-ঢাকা মহাসড়ক । এই সড়কটি উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে প্রধান যোগাযোগ পথ হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সড়কের অবকাঠামোগত ত্রুটি, মোড় ও বাঁকের দুর্বল নকশা, রাস্তার পাশে দোকানপাট ও বাজার, এবং মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চলাচল, এসব কারণে এখানকার দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শেরপুরের বিভিন্ন অংশে সড়কের পাশ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার গড়ে ওঠায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে। দিন-রাত নির্বিচারে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে ইতিমধ্যে “অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে নাটোরের বড়াইগ্রাম, পাবনার ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া এবং নওগাঁর মান্দা ও মহাদেবপুর এলাকায় নিয়মিত প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে রংপুর বিভাগে রংপুরের কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, দিনাজপুরের বিরামপুর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ীও অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে তালিকাভুক্ত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলো হলো, সড়কের নকশাগত ত্রুটি ও অবকাঠামোর দুর্বলতা, সাইনবোর্ড, রোড মার্কিং ও বিভাজকের অভাব, একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চলাচল, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি, চালকদের অদক্ষতা ও অসচেতনতা, সড়কপাশের ঘনবসতি ও বাজারের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, “যেসব এলাকায় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে, সেখানে রাস্তার নকশা ও অবকাঠামোগত সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
সংস্থাটি আরও সুপারিশ করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রোড ডিভাইডার ও সাইনবোর্ড স্থাপন,একই সড়কে ভিন্ন ধরনের যানবাহনের জন্য সার্ভিস লেন তৈরি, অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে ব্যবস্থা, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা নিয়মিত পুলিশি নজরদারির আওতায় আনা।